শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন
সাকিবুজ্জামান সবুর:
ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খালের উপরের আয়রন ব্রীজটি ভেঙ্গে দীর্ঘদিন খালে পড়ে থাকায় তিনটি স্কুলের শিক্ষার্থীসহ পাঁচ গ্রামের শতশত মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। বিকল্প কোন পথ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গা ওই ব্রীজের উপরে সুপারি গাছের সাঁকো দিয়ে লোকজন পারাপার হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। ব্রিজটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবাস্থা নেয়া হয় নাই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রীজের মাঝের অংশ ভেঙ্গে পানিতে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সংস্কারের নেই কোন উদ্যোগ। এতে কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য কৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিনাপানি কেবিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কানাইপুর, শিবপুর, দক্ষিণ কৈখালী, দক্ষিণ চেঁচরী ও বিনাপানি গ্রামের শতশত মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবণের কাজের জন্য মালামাল ও ডালাই মেশিন এ ব্রীজ দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ব্রিজটি ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নলছিটির এক ঠিকাদার ওই বিদ্যালয়ের কাজ করেছেন। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজটি ঠিক করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি।
ওই এলাকার ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মুরাদ সরদার জানান, ব্রীজের মাঝ থেকে ভেঙ্গে গেছে। এখন সাঁকো দিয়ে খুব কষ্ট যেতে হয়। ভয় লাগে যদি খালের মধ্যে পড়ে যাই।
দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন খান বলেন, ব্রীজের মাঝার থেকে ভাইঙ্গা গেছে। এখন পোলাপান ম্দ্রাসায় ও স্কুলে যাইতে পারে না। আমাদের বোঝা নিয়ে চাড় পারাইয়া যাইতে অনেক কষ্ট হয়। এখানে এখন ব্রীজ না হইলে আমরা কোথাইদ্দা যামু। ব্রীজের উফরে একটা চার দিয়া থুইছে এতে বোঝা লইয়া ওডা যায় না।
স্থানীয় বিনাপানি বাজারের ব্যবসায়ী মো. রুস্তুম ফরাজী জানান, কানাইপুরে স্কুল সংলগ্ন ব্রীজটি মাঝ থেকে ভেঙ্গে গেছে। আমরা পার হতে পারি না। ছোট ছেলে-মেয়েরা পার হতে পারে না। একটা সাঁকো দেওয়া হয়েছে এ দিয়েও পার হতে গেলে খালে পড়ার ভয় থাকে। আমাদের সকলের দাবি কর্তৃপক্ষ যেন খুব দ্রæত ব্রীজটি সংস্কার অথবা নতুন একটি ব্রীজ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সেলিম তালুকদার জানান, এলজিইডির অর্থায়নে ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবণের কাজের মালামাল নেয়ার সময় ব্রীজটির একাংশ ভেঙ্গে খালে পড়ে যাওয়ায় পথচারীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের ঠিকাদারের ব্রীজটি সংস্কার করে দেওয়া কথা ছিল। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা এলজিইডি অফিসে অভিযোগ করেছি কিন্ত কোন কাজ হচ্ছে না।
কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান দুলাল জানান, এই ব্রিজটি গত ইউপি নির্বাচনের পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বারবার বলার পরে রিপেয়ারিং করিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরে আর কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। স্কুলের একতলা ভবনের কাজ করছে নলছিটির পারভেজ মিয়া। তার মিকচার মেশিন আনতে গিয়ে ব্রীজটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গেছে। এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে এবং তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ওনার বিল নেওয়ার আগে ব্রীজটি সংস্কার করে দিবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন কিছু হয়নি। কিছুদিন পর স্কুল খুলে দিলে শিশু শিক্ষার্থীদের খুব সমস্যা হবে। অনেক উঁচু একটি সাঁকো দেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে শিশুরা পারাপার হতে পারে না।
শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, ওই ব্রিজটি সংস্কারের জন্য এলজিইডির প্রকৌশলীকে বলেছি তারা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নেওয়ার কথা বলেছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী (এজিইডি) সাদ জাগলুল ফারুক জানান, আমি এখানে যোগদানের পূর্বের ঘটনা। আমি সরজমিনে গিয়ে দেখবো, যদি ঠিকাদার ভেঙ্গে থাকে অবশ্যই তিনি মেরামতের ব্যবস্থা করে দিবেন। তবে ব্রিজটি আমরা অন্য প্রকল্প থেকে করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, স্কুলের কাজের সময় ব্রীজটি ভেঙ্গে যায়। পরে আমি তাদের ডেকে ছিলাম। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, ঠিকাদারকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজটি নিজ খরচে মেরামত করার জন্য। ঠিকাদার যদি সেটি না করে থাকে তাহলে তার জামানত আটকে দেয়া হবে।
ঝালকাঠি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ব্রীজটির খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।